বন্যার জল কিছুটা কমতেই মালদায় শুরু ডায়রিয়ার প্রকোপ

Odd বাংলা ডেস্ক:  গঙ্গা ও ফুলহারের জল সামান্য কমলেও এখনও  চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে দুই নদী। একদিকে যখন জলযন্ত্রণা থেকে স্বস্তির খবর মিলেছে, ঠিক তখনই পেটের অসুখে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে  মালদহে বন্যা পরিস্থিতির মাঝেই প্লাবিত এলাকায়  ডায়ারিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলিতে ৫০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা ডায়ারিয়ার আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।  আক্রান্তদের মধ্যে প্রচুর শিশু  ও মহিলা রয়েছেন। বিষয়টি নিয়েও উদ্বিগ্ন জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্লাবিত এলাকায় মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে ডায়ারিয়ার প্রকোপ ঠেকাতে  প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।  সবমিলিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে জল আরও নামলে ডায়ারিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সেইমতো আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। 

এবিষয়ে মালদহ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক  শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জেলায় ডায়ারিয়ার প্রকোপ সেই অর্থে নেই। জলবাহিত রোগ বলে প্লাবিত এলাকায় উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে প্লাবিত এলাকায় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।  নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, মহানন্দাটোলা, বিলাইমারী সহ  পার্শ্ববর্তী এলাকা  এবং মানিকচকের একাংশে জলবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। অনেকেই পেটের অসুখে ভুগছেন। তাঁদের শরীরে ডায়ারিয়ার উপসর্গ মিলেছে। আমরা ওই রোগীদের  প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়েছি। তাতে অনেকে সুস্থ  হয়ে উঠছেন। এবিষয়ে রতুয়া ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক মাসুদ রহমান বলেন, ডায়ারিয়ার প্রকোপ  খুব একটা নেই।  তবে হাসপাতালে সাত থেকে আটজন ভর্তি রয়েছেন। দুর্গত গ্রামগুলিতে প্রতিদিন মেডিক্যাল টিম যাচ্ছে। যাঁদের  ডায়ারিয়ার উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।  

১৫ দিনের বেশি সময় ধরে জেলার রতুয়া, মানিকচক, হরিশ্চন্দ্রপুর, কালিয়াচক ব্লকের একাংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক লক্ষের বেশি বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে থাকার কারণে অনেকেই জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে গঙ্গা ও ফুলহার এই দুই নদীর জলস্তর ধীরে ধীরে নামছে। গঙ্গা ২৫.৬২ ও ফুলহার ২৮.৩৮ মিটারে নেমে এসেছে। মহানন্দা ২০.৪৭ মিটারে এসে স্থিতিশীল  রয়েছে। টানা ১৫ দিনের বেশি সময় এলাকা প্লাবিত হয়ে থাকায় বিভিন্ন ধরনের গাছ ও ফসল পচে দুর্গন্ধ বেরিয়েছে। ইতিমধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশির পাশাপাশি  ডায়ারিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু রতুয়া ব্লকে ৪০০ জনের বেশি  ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। মানিকচক ও কালিয়াচকের ব্লক মিলে আরও ১০০ জন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। দুর্গত এলাকায় মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে খাবার স্যালাইন সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে জল পরিশুদ্ধ করতে ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। যাঁরা ডায়ারিয়ার ওষুধ নিয়েছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যে সমস্ত রোগী প্রাথমিক ওষুধে সেরে উঠছেন না, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতালে আক্রান্তের সংখ্যা  কম হলেও বহু আক্রান্ত বাড়িতেই চিকিৎসা করাচ্ছেন। গ্রামে গ্রামে মেডিক্যাল টিমের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা  গিয়ে  দুর্গতদের জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। পাশাপাশি ডায়ারিয়া মোকাবিলায় ক্যাম্প করে প্রয়োজনীয় ওষুধ বিলি করা হচ্ছে।

No comments:

Powered by Blogger.