মালদহে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিজমি প্লাবিত, হাজার হেক্টর পাট, ভুট্টার জমি ক্ষতির মুখে
Odd বাংলা ডেস্ক: মালদহের গঙ্গা ও ফুলহার নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। তাতে বিশেষ করে পাট ও ভুট্টা চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী তীরবর্তী এলাকায় প্লাবনের কারণে ১০০০ হেক্টর জমির ফসল বর্তমানে জলের তলায় রয়েছে। বৃহস্পতিবার ফের নতুন করে গঙ্গা, মহানন্দা, ফুলহার তিনটি নদীরই জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এর জেরে আরও কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামগুলি জলে ভেসে রয়েছে। রাস্তাঘাটের উপর দিয়ে জলের স্রোত বইছে। অনেকে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নৌকা ব্যবহার করছেন। কিছু কৃষক লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে জলে ডুবেই পাট কেটে আঁশ ছাড়ানোর জন্য জমা করছেন। জেলা প্রশাসনের কর্তারা প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু করছেন।
এবিষয়ে মালদহ জেলা কৃষিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর স্নেহাশিস কুইলা বলেন, গঙ্গা, ফুলহারের জলে কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। আমরা রিপোর্ট তৈরি করছি। ইতিমধ্যে আমাদের কাছে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতে ১০০০ হেক্টর কৃষিজমি প্রভাবিত হয়েছে। বিশেষ করে পাট ও ভুট্টার জমি জলের তলায় রয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এবিষয়ে রতুয়া-১ ব্লকের কৃষি অধিকর্তারা বলেন, রতুয়ার বিলাইমারি, মহানন্দাটোলা জলে ডুবে থাকায় ৪০ হেক্টর জমির পাট তলিয়ে গিয়েছে। কিছু পাট আঁশ ছাড়ানোর জন্য নদীতে পচানোর জন্য রাখা হয়েছিল। সেগুলিও ভেসে গিয়েছে।
রতুয়ার বিলাইমারির কৃষক আব্দুল ওহাব বলেন, ফুলহার নদীর জল উপচে আমার দু’বিঘা জমির পাট সম্পূর্ণভাবে ডুবে গিয়েছে। এখনও ফসল জলের তলায় রয়েছে। কিছুটা পাট শ্রমিক লাগিয়ে উপরে উঠিয়ে আনতে পেরেছি। তবে জল যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ফসল বাঁচানো সম্ভব নয়। মানিকচক ব্লকের ভূতনির বাসিন্দা প্রলয় মণ্ডল বলেন, ভূতনির সেতু থেকে শুরু করে উত্তর চণ্ডীপুর কেশরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় পাট ও ভুট্টা চাষ হয়। তবে গঙ্গা দিয়ে তেমন জল প্রবেশ করতে না পারলেও ফুলহার নদীর জলে বেশিরভাগ পাট ডুবে গিয়েছে। আমরা দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি। জেলা সেচদপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণবকুমার সামন্ত বলেন, গঙ্গার জলস্তর বেড়েছে। তবে বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। ফুলহার ও মহানন্দার জল কিছুটা বেড়েছে। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি।
সেচদপ্তর জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ, বিহার সহ উত্তর ভারতের আপার ক্যাচম্যান্ট থেকে জল এখনও নামছে। যেকারণে মালদহের নিম্ন অববাহিকায় প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একদিকে বাড়িঘর জলবন্দি অন্যদিকে ফসলের জমি ডুবে যাওয়ায় বাসিন্দারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক কৃষকের ফসল জলে ডুবে থাকায় তাঁরা হতাশায় ভুগছেন। সম্প্রতি, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। ফের তাঁদের ফসল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এদিন গঙ্গা চরম বিপদসীমা ছাড়িয়ে ২৫.৯৮ মিটার, ফুলহার নদী বিপদসীমা পার করে ২৮.২৫ মিটার উপর দিয়ে বইছে। মহানন্দাও বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। এদিন বিকেলে মহানন্দা নদীর জলস্তর দাঁড়ায় ২০.৪১ মিটারে। কৃষিদপ্তর জানিয়েছে, নদীগুলিতে জল বৃদ্ধির কারণে রতুয়া, মানিকচক, হরিশ্চন্দ্রপুর, কালিয়াচক ব্লকের নদী তীরবর্তী ৯০০ হেক্টর জমির পাট এবং ৬০ হেক্টর জমির ভুট্টা ডুবে গিয়েছে।
No comments: