মালদা জুড়ে বন্যা পরিস্থিতি, গঙ্গা, মহানন্দা ও ফুলহার নদীতে
মালদা আপডেট ডেস্ক: মালদহে গঙ্গা, ফুলহার ও মহানন্দা নদীতে ফের জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। জেলার তিনটি প্রধান নদীতে জলস্তর বৃদ্ধি হতে শুরু করায় নদী পাড়ের বাসিন্দারা উদ্বেগে রয়েছেন। নদীগুলির জলস্তর বিপদসীমার খুব কাছ দিয়ে বইছে। বৃহস্পতিবার গঙ্গার জলস্তর বিপদসীমা থেকে মাত্র ৯ সেমি নীচে ছিল। স্বাভাবিকভাবে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে বন্যার ভ্রূকুটি দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি গঙ্গার পাড়ে ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে গঙ্গার ভাঙন দেখা দিয়েছে। গঙ্গার জলস্তর কমে যাওয়া হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেতে শুরু হওয়ায় কালিয়াচক-২ ব্লকের পঞ্চানন্দপুর নদীর চরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর বুকে জেগে ওঠা বিশাল চর ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ভাঙন রোধে জেলা সেচদপ্তর কাজ শুরু করেছে।
এবিষয়ে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলেন, হঠাৎ করে গঙ্গার জল ফুলেফেঁপে উঠেছে। যেভাবে জলস্তর বাড়ছে, তাতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কালিয়াচকের পঞ্চানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ফুলু রানি বেওয়া বলেন, নদীর গর্ভে জেগে ওঠা বড় চর ফের ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। জল বাড়ায় আরও ভয় হচ্ছে। জেলা সেচদপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা বলেন, তিনটি প্রধান নদীর জলস্তর বাড়ছে। এভাবে জলস্তর বৃদ্ধি পেলে নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে বন্যার কোনও আশঙ্কা নেই। নদীর চরে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে চরে নদী ভাঙন হলে বসতি এলাকার পাড় রক্ষা হবে। এবিষয়ে মালদহ জেলা সেচদপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণবকুমার সামন্ত বলেন, নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেলেও ভাঙন কোথাও নেই। নদীগুলির জলস্ফীতির উপর নজরদারি চলছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় নদীর পাড় রক্ষায় কাজ চলছে।
জেলা সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে গঙ্গা নদী ২৪.৬০ মিটারের উপর দিয়ে বইছিল। গঙ্গার বিপদসীমা হল ২৪.৬৯ মিটার। গঙ্গা যেভাবে ফুঁসছে, তাতে এদিন রাতেই বিপদসীমা পার করে দেবে। এদিকে জল বাড়ছে জেলার অন্য দুই প্রধান নদী মহানন্দা ও ফুলহারে। এদিন সকালে মহানন্দা ১৮.৬০ মিটার এবং ফুলহার ২৬.৩৫ মিটারের উপর দিয়ে বইছিল। জেলায় মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হাওয়ায় নদীগুলিতে জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীগুলিতে জলস্ফীতির সঙ্গে তীব্র স্রোত বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে গঙ্গার জলে ঘূর্ণি দেখা দিয়েছে। পঞ্চানন্দপুর, শাকুল্লাপুর, বাঙ্গিটোলা, মানিকচকের কাশিঘাটের কাছে ঘূর্ণি তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, নদীপাড় সংলগ্ন এলাকায় জল ঘুরলে ভাঙনের সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র খরস্রোতের সঙ্গে জলে ঘূর্ণিতে পাড়ের মাটি সরে যায়। তখনই জল কমলে বা বাড়লে ভাঙন দেখা দেয়। যে কারণে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা উদ্বেগে রয়েছেন। অনেকে ভাঙনের আতঙ্কে প্রহর গুণছেন। গঙ্গা বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেলে নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার গ্রামগুলিতে জল ঢুকে যাবে। এতে ওই সংশ্লিষ্ট এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে জল কমা বাড়ার মাঝে বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর, মানিকচকের কেশরিটোলাতে ভাঙন মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে সেচদপ্তর। ওইসব এলাকায় মাঝেমধ্যে পাড় ধসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক বসতবাড়ি ও চাষের জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। পুনরায় ভাঙন যাতে না দেখা যায়, সেজন্য সেচদপ্তরের কর্তারা দিনরাত ভাঙন মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছেন। বাঁশের ঘেরায় বালির বস্তা ও বোল্ডারের সাহায্যে পাড় রক্ষার জন্য কাজ চলছে।
No comments: