ইনিই কি তবে বাস্তবের সিধু জ্যাঠা, মালদা জেলার মানিকচকে বসে সংগ্রহ করেছেন লক্ষাধিক বই
মালদা Update ডেস্ক: সিধু জ্যাঠাকে প্রথম আমরা দেখি সত্যজিতের 'সোনার কেল্লা' উপন্যাসে৷ সত্যজিৎ লিখছেন, 'ফেলুদা হাতের বইটা সশব্দে বন্ধ করে টকটক দুটো তুড়ি মেরে বিরাট হাই তুলে বলল 'জিওমেট্রি'৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম, এতক্ষণ কি তুমি জিওমেট্রির বই পড়ছিলে? বইটায় একটা খবরের কাগজের মলাট দেওয়া, তাই নামটা পড়তে পারিনি৷ এটা জানি যে, ওটা সিধু জ্যাঠার কাছ থেকে ধার করে আনা৷ সিধু জ্যাঠার খুব বই কেনার বাতিক, আর বইয়ের যত্ন৷ সবাইকে বই ধার দেন না, তবে ফেলুদাকে দেন৷'
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সংগ্রহ, Image Source: oddbangla.com |
ঠিক যেন এই ফেলুদার সিধু জ্যাঠার বাস্তব রূপ। নাম সুব্রত পাঠক। থাকেন মালদা জেলার মানিকচকে। কবে থেকে বইয়ের প্রতি তার ঝোঁক নিজেও তাঁর মনে নেই। কিন্তু শুধু এইটুকু জানেন এখনও পর্যন্ত লক্ষাধিক বই নিজের সংগ্রহে রেখেছেন। ইতিহাসকে রক্ষা করা তার নেশা। সংগ্রহ করেছেন ভারতে ব্রিটিশ শাসনে মুদ্রিত শেষ বুক সিরিজ 'দ্য ওয়ান্ডারফুল ইন্ডিয়া'। কে বলে যোগাযোগ ব্যবস্থা হতে পারে অন্তরায়? মালদা জেলা্র এক গাঁয়ে বসে সুব্রত পাঠক দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সংগ্রহকর্ম। তবে ফেলুদার সিধু জ্যাঠার থেকে এই মানুষটার একটু পার্থক্য রয়েছে। বইয়ের পাশাপাশি ডাকটিকিট ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহের প্রতিও রয়েছে তার নেশা।
বিশেষ বিশেষ দিনের সংবাদপত্র সংগ্রহ করে রাখাও তার একটা স্বভাব। এই যেমন সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি হোক বা কার্গিলের যুদ্ধ। কোন দিন কোন এলাকায় কী ঘটেছিল তার একটা করে সিরিজ পাবেন তাঁর কাছে। যে সিরিজে থাকবে ভারতের বেশিরভাগ সংবাদপত্রের ব্রডশিট। তবে এই কাজে তাঁর খুব অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুব্রত বাবু। ইতিমধ্যেই এই কাজে একটা ঘর গিয়েছে ভরে।
দেশ পত্রিকার প্রায় ৬০০ সংখ্যা সংগ্রহে রয়েছে, Image Source: oddbangla.com |
তবে সুব্রতবাবু কেবল বই সংগ্রহ করেন না। তাঁর লেখালেখির প্রতিও রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। এই তো লকডাউনে নিজে প্রায় ১০০ খানেক গল্প-কবিতা লিখে ফেলেছেন। জিজ্ঞাসা করায় হেঁসে জানালেন 'লকডাউনে তো পৃথিবীটা থমকে গিয়েছিল। কী আর করব তাই লেখালেখিটা চালিয়ে গিয়েছি।'
সংগ্রহের তালিকা থাকা বইগুলিকে দেখলে চমকে যেতে হয়। এমন কিছু পত্রিকার এমন কিছু সংখ্যা তার সংগ্রহে রয়েছে, যার মুদ্রণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহুদিন আগে। শুধু তাই নয় সেই প্রকাশনীর খোঁজ পাওয়াও আজ কষ্টের।
No comments: