অবশেষে মনোনয়ন ফিরিয়ে নিলেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা মনোরঞ্জন দাস

মালদা আপডেট ডেস্ক: বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিল নিচুতলার কর্মীরা। ব্যতিক্রম ছিল না মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর। গত ৬ এপ্রিল বিজেপি প্রার্থী মতিবুর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে মান্যতা দিতে না পারায় প্রার্থী হিসেবে নিজের মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন প্রাক্তন বিজেপির কিষান মোর্চার জেলা সহ সভাপতি মনোরঞ্জন দাস। কিন্তু গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের সামনে জানান তিনি নিজের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করছেন এবং আগামী দিনে বিজেপির সাথেই থাকছেন। দলের নেতাদের সাথে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল যার রেশে তিনি এমন কাজ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন মনোরঞ্জন দাস। ঘটনার পর একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের দাবি এই সমস্ত প্রার্থীদের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে বাধ্য করছে বিজেপি। যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি জেলা বিজেপি নেতৃত্ব ও মনোরঞ্জন দাসের।

 বিক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ ছিল টাকার বিনিময়ে প্রার্থী পদ পেয়েছে মতিবুর রহমান। তাছাড়াও তিনি দাবি করেছিলেন কানাইয়ালাল আগারওয়ালের হত্যাকাণ্ডে জড়িত আছে মতিবুর রহমানের দাদা। তিনি বলেছিলেন কানাইয়ালাল আগরওয়ালের খুনের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কোনোভাবেই সমর্থন করবেন না। এ সমস্ত কারণে তিনি বিজেপি দল থেকে সরে এসে নির্দল প্রার্থী হিসাবে গত ৬ এপ্রিল হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভা আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মনোনয়ন জমা করেন। কিন্তু সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই সিদ্ধান্ত বদল করলেন মনোরঞ্জন বাবু। সোমবার তিনি চাঁচল মহকুমা আধিকারিকের দপ্তরের সামনে দাঁড়িয়ে জানালেন তিনি বিজেপিতে আছেন। নরেন্দ্র মোদী তার নেতা। তাই তিনি এবারের বিজেপির প্রার্থী হয়ে ভোট প্রচার করবেন। তাই আজ তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন। কানাইয়ালাল আগারওয়ালের খুন সম্পর্কেও আজ তার গলায় শোনা গেল অন্য কথা। আজ তিনি বললেন মতিবুরের দাদা ঐ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। সম্পূর্ণ ভুল খবর ছিল তাদের কাছে। এবং সম্পূর্ণ একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল দলের সাথে।

এদিকে মনোরঞ্জন বাবুর মনোনয়ন প্রত্যাহারের জেরে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বরা। তাদের বক্তব্য পদের লোভ এবং টাকার বান্ডিল দেখিয়ে মনোরঞ্জন বাবুকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে এলাকার বিজেপির নেতারা। যারা কিছুদিন আগে পর্যন্ত হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন আজ তারাই ভোল পাল্টে নির্দল প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন এটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়।

হরিশচন্দ্রপুর অঞ্চল চেয়ারম্যান সঞ্জিব গুপ্তা বলেন, "বিজেপি থেকে নির্দল আবার নির্দল থেকে বিজেপি। বিজেপির পায়ের নীচে মাটি নেই। এর ভেতরে একটা বড়ো অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়েছে। আজকে হরিশ্চন্দ্রপুরে বিজেপির ফ্ল্যাগ উড়িয়ে দিল, পার্টি অফিস ভাঙচুর করল, সাংসদের বিরুদ্ধে কোটি টাকার তছরুপের অভিযোগ আনলো আর আজ আবার তারাই বিজেপিতে ফিরে গেল। এটাই বিজেপির কালচার। মানুষ এদের সত্যতা বুঝে গেছে।"

হরিশ্চন্দ্রপুর বিজেপির বিধায়ক প্রার্থী মতিবুর রহমান বলেন, "আমি আগেই বলেছিলাম ও আমার ভাই নয়। আজ সবকিছু সত্যি সবার সামনে চলে এসেছে। যেই এই কথা বলেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেছে। তৃণমূল বরাবরই মিথ্যার রাজনীতি করে।"

ভোট রাজ্যে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই গেরুয়া মহলে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বাকি সব জায়গায় সংঘর্ষ মিটলেও অব্যহত ছিল হরিশ্চন্দ্রপুরে। এইদিন মনোরঞ্জন বাবুর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের পর হরিশ্চন্দ্রপুর বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

No comments:

Powered by Blogger.