মালদহের মানিকচক ও রতুয়া প্লাবিত

Odd বাংলা ডেস্ক: চূড়ান্ত বিপদসীমা পার করল গঙ্গা। বুধবার সকালে মালদহে গঙ্গার জলস্তর চরম বিপদসীমার চেয়ে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইতে থাকে। পাশাপাশি ফুলহার নদীর জলও বিপদসীমা ছুঁইছুঁই।  মহানন্দাও বিপদসীমার দিকে এগচ্ছে। এদিন গঙ্গা চূড়ান্ত বিপদসীমা পার করায় মানিকচক ও রতুয়া ব্লকের একাংশে  বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দু’টি ব্লকের প্রায় ৮ হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে। শুধু রতুয়াতেই ৬ হাজার পরিবার বন্যা পরিস্থিতির কবলে পড়েছে। জল ক্রমাগত বাড়তে থাকায় আরও বিপদের আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। 

যেভাবে জল বাড়ছে, তাতে  জেলায় ২০১৭  বন্যার স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে। দুর্গত এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে দিয়ে উঁচু জায়গা ও স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। মানিকচকের ভূতনি এবং রতুয়ার বিলাইমারি, মহানন্দাটোলায় গঙ্গা ও ফুলহারের সাঁড়াশি চাপে  ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। বাসিন্দারা এনিয়ে আতঙ্কিত। দুর্গতদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পঞ্চায়েত প্রশাসনের তরফে মাইকিং শুরু করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতির উপর নজরদারি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। 

মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মৃদুল হালদার বলেন, গঙ্গার জল চূড়ান্ত বিপদসীমা পার করেছে।  তবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে। যেখানে যতটুকু দরকার আমরা বন্দোবস্ত রেখেছি।  ফ্লাড রেসকিউ শেল্টার খুলে দেওয়া হয়েছে।  পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে  আমরা বাসিন্দাদের  নিরাপদ  আশ্রয়ে সরিয়ে নেব। চাঁচলের মহকুমা শাসক কল্লোল রায় বলেন, রতুয়া ব্লকের নদী তীরবর্তী  গ্রামগুলিতে প্রায় ৬ হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে।  দুর্গত এলাকায় বিডিওদের নজর দিতে বলেছি। প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রতুয়ার  বিলাইমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের লুৎফর রহমান বলেন, নদীর জলে পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ২হাজার পরিবারের বাড়িঘরে জল উঠেছে। আমরা মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং শুরু করেছি। এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। পর্যাপ্ত ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।  

মানিকচকের বাসিন্দা প্রকাশ রায় বলেন, গঙ্গার জল যে হারে বাড়ছে, তাতে আতঙ্কে রয়েছি আমরা। কী হবে জানি না। জেলা সেচদপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণবকুমার সামন্ত বলেন, গঙ্গা চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। যেখানে নদীভাঙন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে সেখানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছি। সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার গঙ্গার জলস্তর বিপদসীমার ২৫.২০ মিটার উপরে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় জল বেড়ে চরম বিপদসীমা  পার করেছে। এদিন সকালে  গঙ্গা  ২৫.৩২ মিটারের উপর দিয়ে বইতে শুরু করে। ফুলহার নদী বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। ফুলহার ২৭.২০ মিটারের উপর দিয়ে বইছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মহানন্দারও জল বেড়েছে। মহানন্দার জলস্তর ছিল  ১৯.৩৫ মিটার। এদিন জল বেড়ে  ১৯.৫৪ মিটারে পৌঁছয় মহানন্দা। জেলার তিনটি প্রধান নদীর জল ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায়  বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মানিকচকের ভূতনি, হীরানন্দপুর, ডোমহাটের নিচু অংশ প্লাবিত হয়েছে। এদিন সকালে  বিলাইমারি জাকির টোলা, মহানন্দা টোলা ও নাককাট্টি গ্রামে  জল ঢুকেছে। গঙ্গা ও ফুলহারের জলে নাককাট্টির রাস্তার উপর দিয়ে জল বইছে। বহু গ্রাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা দ্বীপের মতো বসবাস করছেন। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে  এলাকার উঁচু বাঁধ  ও ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে  দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে। গঙ্গার জল চূড়ান্ত বিপদসীমা পার করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিন ফের বৈষ্ণবনগরের  চীনা বাজারে ভাঙন হয়। ফলে বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

No comments:

Powered by Blogger.